
ভক্তি হলো কারোর প্রতি গভীর ভালোবাসা। ভালোবেসে তার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যাওয়া। একত্ব অনুভব করা একে অপরের সাথে। যেখানে একা ছিলাম সেখানে বিকাশ হলো নিজের অস্তিত্বের।
এখন প্রশ্ন কার প্রতিই আমাদের এই ভক্তি এবং কার সাথেই আমাদের এই একত্বতা ? যে কোন ব্যক্তি, বস্তু বা বিষয় হতে পারে। হতে পারে, পিতা, মাতা কিংবা বন্ধু এমন ব্যক্তি অথবা অর্থ, সম্পদ, ল্যাপটপ বা মোবাইল বস্তু কিংবা সাইন্স, টেকনোলজি, আধ্যাত্মিকতা, সংষ্কৃতি ইত্যাদি বিষয়। প্রকৃত পক্ষে এগুলোর সাথেই আমাদের সম্পৃক্ততা বেশী। কিন্তু এখানে যেহেতু আধ্যাত্মিক দৃষ্টি কোন থেকে আলোচনা হচ্ছে তাই পরমাত্মার প্রতিই আমাদের ভক্তি বা একত্বতা।
কিন্তু কে সেই পরমাত্মা এবং কী তাঁর স্বরূপ ? এই প্রশ্নের উত্তরে আমরা বলবো আমার ঘরের এক কোনে সিংহাসনে যে বিগ্রহ বা ছবি আছে সেই ভগবান বা পরমাত্মা। ছোট বেলা থেকেই দেখছি আমার মা তাঁকে স্নান করান, সুন্দর ভাবে সাজ-সজ্জা দেন,পূজা করেন, ভোগ দেন, নিদ্রায় রাখেন, জাগরন করান। এই তো ভগবান। আমার ভগবান আমার মায়ের সেবাতেই এখন অব্দি টিকে আছেন। আমার মা প্রত্যহ ভগবানের সেবা করেন।
এই জড় ছবিকে পূজো করতে করতে জড়কেই ভগবান মনে করছি। জড়ের সেবাতে জড়তাই প্রাপ্ত হয়েছি। ভুলেই গেছি ভগবান জড় নয় চেতন সত্ত্বা। আমাদের সেবায় তিনি টিকে থাকেন না, বরং তাঁর প্রকৃতির উপর নির্ভর করে আমরা টিকে আছি।
তিনি জড় নন্ , চেতন। তাঁর চেতনায় তিনি নিজেকে সৃষ্টির মাধ্যমে বিকশিত করেছেন। তাই সৃষ্টির রূপই তাঁর রূপ। সৃষ্টি আর স্রষ্টা এক ও অদ্বিতীয়। অতএব সৃষ্টিকে ভালোবাসলেই স্রষ্টাকে ভালোবাসা হয়। সৃষ্টির সাথে যুক্ত হলেই তাঁর সাথে যুক্ত হওয়া যায়। একা আমি যখন এই বিশাল সৃষ্টির সাথে সম্পৃক্ত হলাম তখন আমার জড়তাকে কাটিয়ে দৃঢ়তা ফিরে পেলাম। জড় বিগ্রহর জড়ত্ব থেকে মুক্ত হয়ে চেতনাময় জগতের সাথে মিশে সচেতন হলাম।
এই জ্ঞান অর্জনের পরই কী আমি বিশ্বরূপী পরমাত্মার সাথে সংযুক্ত হলাম ? না, আমি সদা-সর্বদা সৃষ্টির সাথে সম্পৃক্ত ? একবার ভাবুন তো আপনি কী একা কোন সত্ত্বা, না আপনি আপনার পরিবারের অংশ ? শুধুই কী পরিবারের অংশ, না সমাজের অংশ ? শুধুই কী সমাজের অংশ না রাষ্ট্রের অংশ ? শুধু কী রাষ্ট্রের অংশ, না পৃথিবীর অংশ ? শুধু কী পৃথিবীর অংশ, না কী সৌর জগতের অংশ ? শুধু কী সৌর জগতের অংশ, না মহাবিশ্বের অংশ ? প্রকৃত পক্ষে আমরা সবাই এই মহাবিশ্বের অংশ, তাই একে অপরের সাথে সদাই সম্পৃক্ত। এই মহাবিশ্বই তিনি। তাই একজন ভক্ত এই বিষয়টি বুঝে , মহাবিশ্বের সাথে সংযুক্ত হয়ে পরমাত্মার সাথে নিজের অখন্ড সম্পৃক্ত তাকে অনুভব করেন। এই সম্পৃক্ততার অনুভবের কারনেই তিনি সুদৃঢ় হন। তাই সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনায় একজন ভক্ত কখনো বিচলিত হন না।
তাই একজন ভক্ত হতে গেলে বিগ্রহের জড়তার উর্ধে উঠে বিশ্ব চেতনার দৃঢ়তায় দাঁড়াতে হবে।।
হরি ওম ।।