কেহ বলছেন ঈশ্বর গোলকে আছেন, কেহ বলছেন ঈশ্বর বৈকুণ্ঠে আছেন, কেহ বা প্রমাণ করতে ব্যস্ত ঈশ্বর কৈলাশে আছেন, কেহ বা আকাশের বৃন্দাবনে আছেন বলে ব্যক্ত করছেন, কেহ বলছেন জানি না, তবে আকাশের কোথাও আছেন, কেহ বা বলছেন সাত আসমানের উপর আছেন। কোথায় আছেন এ কেহই সঠিক জানেন না, তবে সবাই এই টুকু নিশ্চিত যে, ঈশ্বর আমাদের মাঝে নেই। কারন ? কারন, তিনি আমাদের থেকে শ্রেষ্ঠ, তাই।
শুধু মাত্র ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্যই, তাঁকে এই ধরাধামে রাখা গেল না। কিন্তু সৃষ্টিতে তো আমরা তা দেখি না। শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি গুলো তে এখানেই থাকেন। তাঁদের শ্রেষ্ঠত্বর কোন ক্ষতি হয় না, বরং এই পৃথিবীই তাঁদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশের স্থান। শ্রেষ্ঠত্ব কর্মর উপর নির্ভর করে, পৃথিবীতে বসবাস না করার উপর নয়।
চোখের অন্তরালে থাকা, একে বারে না দেখা, না শোনা ও অনুভব না করা এক কল্পিত ঈশ্বরের বিগ্রহ ও ছবিতে ঘর, বাড়ি, মঠ ও মন্দির ভরে উঠেছে। প্রাসাদ সম মন্দির, আড়ম্বর শৃঙ্গার ও ছাপান্ন ব্যঞ্জনে তাঁদের পূজাদি ভোগ নিবেদন চলছে আর তাঁদের কারণেই সব চাইতে বেশী অবহেলিত হয়েছে জীবন্ত মানুষ। জীবন্ত মানুষের চেয়ে জড় বিগ্রই আমাদের কাছে বেশী গুরুত্বপূর্ণ ও পূজনীয় হয়ে উঠেছে।
হ্যাঁ তাই তো হওয়ার কথা। আমার ঈশ্বর যখন আমার বিকৃত মস্তিষ্কের সৃষ্টি এক মহাকাল্পনিক বিগ্রহ, তখন ঈশ্বরীয় সকল শ্রদ্ধা তো সেই ধাতব পদার্থরই পাওয়ার কথা। জীবন্ত মানুষ এখানে তুচ্ছ। হিউম্যান ভ্যালুস্ এর এখানে কোন গুরুত্ব বা মূল্য নেই। সৃষ্টি এক বেড়া জাল এখানে, কোন ভাবেই এখানে মনযোগ দেওয়া যাবে না। তাই সৃষ্টির সেবা করে সৃষ্টিকে আরও সামনের দিকে নিয়ে যাওয়াই অপরাধের কথা। ইহজাগতিক সফলতা মূল্যহীন, সফল ব্যক্তি তুচ্ছ ও প্রকৃত জ্ঞানহীন। এই পাথির্ব সফল জাঁকজমকতা শুধু রজগুনযুক্ত ভানুমতির খেলা। এ মায়া, এ মোহ, ভাগো এখান থেকে, ভাগো। এই সৃষ্টি থেকে যত তারাতারি মুক্তি পাওয়া যায় ততই মঙ্গল। সৃষ্টিকে ছাড়ো যত তারাতারি সম্ভব, স্রষ্টার দাসত্ব অর্জন করো। কল্পিত ঈশ্বরের দাস হওয়াই আমাদের জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য।
কাল্পনিক সেই ঈশ্বর থেকে বেরিয়ে আসুন। সর্বত্র স্থিত সেই চেতনা কে অনুভব করুন। সেই নিরাকার চেতনায় সৃষ্টি রূপে সাকার ঈশ্বর। তাই সৃষ্টির সেবায় পরমাত্মার সেবা। এই সৃষ্টির মাধ্যমেই সেই চেতনাকে অনুভব করা যায় যা আমার অস্তিত্ব। এর জন্য মন, বুদ্ধি ও অহংকার কে বিশুদ্ধ করুন, সাধনা করতে থাকুন। চেতনার উন্মেষ হবে, জীবন্ত ঈশ্বরকে বুঝতে পারবেন তিনি বাইরে কোথাও নেই তিনি আত্মা রূপে সর্বত্র বিরাজিত। না বৈকুণ্ঠে, না গোলকে না সৃষ্টি ছেড়ে অন্য কোথাও। জীবন্ত সৃষ্টির মাঝেই জীবন্ত ঈশ্বর।
হরি
